১. পরিচিতি ও ইতিহাস
- জেলার পরিচিতি: শেরপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের অধীনে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ইতিহাস: মুঘল শাসনামলে এই অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল এবং এখানকার নামকরণ হয় আফগান নেতা শের আলীর নামে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসনামলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
২. ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু
- ভৌগোলিক অবস্থান: শেরপুর জেলা ২৫°০৩’ থেকে ২৫°৩১’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৩’ থেকে ৯০°৩৩’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
- সীমানা: উত্তরে ভারতীয় মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে জামালপুর, পূর্বে ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইল।
- জলবায়ু: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু শেরপুরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য; গ্রীষ্মে উষ্ণ এবং বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
৩. প্রশাসনিক কাঠামো ও উপবিভাগ
- উপজেলা: শেরপুর জেলায় মোট ৫টি উপজেলা রয়েছে— শেরপুর সদর, নকলা, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী এবং শ্রীবরদী।
- পৌরসভা: জেলা সদর সহ নালিতাবাড়ি ও শ্রীবরদী পৌরসভা বিদ্যমান।
৪. জনসংখ্যা ও জনমানবিক বৈশিষ্ট্য
- মোট জনসংখ্যা: শেরপুরে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বসবাস।
- ভাষা: বাংলা প্রধান ভাষা, তবে আঞ্চলিক উপভাষা ও উপজাতীয় ভাষার ব্যবহারও দেখা যায়।
- ধর্ম: মুসলমান এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি, কিছু উপজাতীয় ধর্মাবলম্বী মানুষও বসবাস করেন।
৫. অর্থনীতি ও শিল্প খাত
- কৃষি: ধান, পাট, গম এবং শাকসবজি উৎপাদন শেরপুর জেলার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান অংশ।
- শিল্প: এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে; বাঁশ ও বেতের কাজের জন্য শেরপুর বেশ জনপ্রিয়।
৬. শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- শেরপুর সরকারি কলেজ: জেলার প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
- নকলা উচ্চ বিদ্যালয়: স্থানীয় শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৭. স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা
- সরকারি হাসপাতাল: শেরপুর সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
- বেসরকারি ক্লিনিক: বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
৮. পর্যটন আকর্ষণ ও দর্শনীয় স্থান
- গাজনি অবকাশ কেন্দ্র: পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
- নালিতাবাড়ি জমিদার বাড়ি: ঐতিহাসিক এই বাড়িটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
- মধুটিলা ইকো পার্ক: সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর জন্য এই পার্কটি জনপ্রিয়।
৯. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
- সড়কপথ: ঢাকা থেকে সড়কপথে শেরপুর পৌঁছানো সহজ এবং দ্রুত।
- রেলপথ: শেরপুর জেলায় সরাসরি রেলপথ নেই, তবে জামালপুর থেকে শেরপুর পৌঁছানো যায়।
- নৌপথ: ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে নৌপথে কিছু অংশে যোগাযোগ করা সম্ভব।
১০. স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি
- প্রতিনিধিত্ব: জাতীয় সংসদে শেরপুর জেলা ৩টি আসনে প্রতিনিধিত্ব করে।
- জেলা প্রশাসন: জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
১১. বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব
- মহিউদ্দিন আহমেদ: বিশিষ্ট লেখক এবং মানবাধিকারকর্মী।
- ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানী।
১২. জরুরি যোগাযোগ
- জরুরি সেবা: পুলিশ – ৯৯৯, ফায়ার সার্ভিস – ১০২।
- প্রধান হাসপাতাল: শেরপুর সদর হাসপাতাল।
১৩. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
- উৎসব: পহেলা বৈশাখ, ঈদ, দুর্গাপূজা এবং বিভিন্ন স্থানীয় আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়।
- খাদ্য: শেরপুরে ধোইয়া মাছ, পিঠা এবং বিশেষ করে স্থানীয় ফলমূল জনপ্রিয়।
১৪. উন্নয়ন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- অবকাঠামো উন্নয়ন: সড়ক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি প্রকল্প চলছে।
- পর্যটন উন্নয়ন: পর্যটনকে আরও উন্নত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
Leave a Reply