পাবনা জেলা: বিস্তারিত তথ্য প্রোফাইল

. পরিচিতি ইতিহাস

  • জেলার পরিচিতি: পাবনা জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলাটি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। এটি কৃষিভিত্তিক জেলা এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।
  • ইতিহাস: পাবনা জেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ‘পাবনা’ শব্দটি পার্শি শব্দ “পাব্বানা” থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়, যা অর্থাৎ শান্তিপ্রিয় মানুষদের আবাসস্থল। ১৮২৮ সালে পাবনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ব্রিটিশ আমলে এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এখানে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, যেমন নীল বিদ্রোহ।

. ভূগোল আবহাওয়া

  • ভৌগোলিক অবস্থান: পাবনা জেলা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর উত্তরে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ, দক্ষিণে কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জ, পূর্বে সিরাজগঞ্জ এবং পশ্চিমে কুষ্টিয়া ও নাটোর জেলা। এটি বাংলাদেশের ২৩.৯৪° থেকে ২৪.২৩° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.১৫° থেকে ৮৯.৩২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
  • প্রধান নদী: পাবনা জেলার প্রধান নদীগুলি হলো পদ্মা, ইছামতী, হুরাসাগর, গড়াই এবং চন্দ্রা। এই নদীগুলি জেলার কৃষি ও পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • আবহাওয়া: পাবনার আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩৮°C পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং শীতকালে তাপমাত্রা ১০°C পর্যন্ত নেমে আসে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকে এবং এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

৩. প্রশাসনিক বিবরণ

  • উপজেলা: পাবনা জেলার ৯টি উপজেলা রয়েছে: পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, সুজানগর, সাঁথিয়া, ভাঙ্গুড়া ও বেড়া।
  • প্রশাসনিক কাঠামো: পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রত্যেক উপজেলার নিজস্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়েছে।
  • পৌরসভা ইউনিয়ন পরিষদ: পাবনা জেলায় ৮টি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।

৪. জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য

  • মোট জনসংখ্যা: ২০২৩ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পাবনা জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ।
  • ভাষা: বাংলা ভাষা জেলার প্রধান ভাষা হলেও আঞ্চলিক বাংলা ভাষার ব্যবহার বেশি প্রচলিত।
  • ধর্ম: মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে। মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে।
  • শিক্ষার হার: পাবনা জেলার শিক্ষার হার প্রায় ৫৮%, যা দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা কম।

. অর্থনীতি শিল্প

  • প্রধান অর্থনৈতিক খাত: পাবনার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক। এছাড়া শিল্প খাত, বিশেষ করে চিনি, টেক্সটাইল ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদন এ জেলার অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
  • কৃষি পণ্য: ধান, পাট, গম, সরিষা, আলু এবং ডাল এই জেলার প্রধান কৃষি পণ্য। এছাড়া সবজি, তরমুজ এবং বিভিন্ন মৌসুমী ফল উৎপাদিত হয়।
  • শিল্প প্রতিষ্ঠান: পাবনা চিনিকল, ইষ্টার্ন ক্যাবলস এবং ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) এই জেলার প্রধান শিল্প কেন্দ্র। ইপিজেডে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি তাদের উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনা করে।

. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

  • বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা ক্যাডেট কলেজ এই জেলার প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
  • প্রাথমিক মাধ্যমিক স্কুল: পাবনা জেলায় অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
  • কারিগরি শিক্ষা: পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যা কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

৭. স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা

  • সরকারি হাসপাতাল: পাবনা সদর হাসপাতালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে।
  • ক্লিনিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র: প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি কিছু হাসপাতাল এবং ক্লিনিক রয়েছে।
  • এনজিও স্বাস্থ্যসেবা: ব্র্যাক, আশা, গ্রীণ ডেল্টা এনজিওসমূহ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

. পর্যটন আকর্ষণ

  • বিখ্যাত পর্যটন স্থান: হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (ঈশ্বরদী), আহমদপুর দরগাহ, চাটমোহর মন্দির, পোড়াবাড়ী মাজার ও জিন্দাপীর মাজার।
  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: বারোয়ারি পূজা, পিঠা উৎসব এবং পহেলা বৈশাখের মেলা।
  • আবাসন ব্যবস্থা: পাবনা শহরে বেশ কয়েকটি হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। তাছাড়া পর্যটকদের জন্য উন্নত মানের রিসোর্টের সুবিধা রয়েছে।

. পরিবহন অবকাঠামো

  • রেলপথ: পাবনা-ঈশ্বরদী রেল সংযোগ দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট।
  • সড়ক যোগাযোগ: পাবনা জেলা ঢাকা ও রাজশাহীর সাথে প্রধান সড়কপথে সংযুক্ত।
  • নৌপথ: পদ্মা নদীর মাধ্যমে পাবনা জেলা বিভিন্ন নৌপথে সংযুক্ত, যা মাল পরিবহন ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১০. সংস্কৃতি ঐতিহ্য

  • প্রধান উৎসব: পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ এবং নববর্ষে স্থানীয় মেলা।
  • লোকসংস্কৃতি: ভাটিয়ালি গান, ভাওয়াইয়া এবং বিভিন্ন ধরণের লোকনৃত্য এই জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
  • বিখ্যাত খাবার: পাবনার দই এবং মিষ্টি সারাদেশে জনপ্রিয়।

১১. স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি

  • প্রতিনিধিত্ব: পাবনা জেলার সাংসদ ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদে ও স্থানীয় সরকারে কাজ করেন।
  • জেলা প্রশাসন: জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করেন।

১২. বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

  • সাহিত্যিক: কায়কোবাদ, কাজী ইমদাদুল হক।
  • রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব: কর্ণেল তাহের, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব।
  • শিল্পী ও অভিনেতা: চঞ্চল চৌধুরী , যিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে প্রসিদ্ধ।

১৩. জরুরী তথ্য

  • জরুরি যোগাযোগ: পুলিশ – ৯৯৯, ফায়ার সার্ভিস – ১০২।
  • ত্রাণ ব্যবস্থা: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে।
  • এনজিও কার্যক্রম: ব্র্যাক, আশা, গ্রীণ ডেল্টাসহ আরও অনেক সংস্থা কাজ করছে।

১৪. উন্নয়ন প্রকল্প

  • চলমান প্রকল্প: পদ্মা নদীর বাঁধ প্রকল্প, ঈশ্বরদী রেলওয়ে উন্নয়ন।
  • বিদেশি সহায়তায় প্রকল্প: ইউএনডিপি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।