১. পরিচিতি ও ইতিহাস
- জেলার পরিচিতি: ঢাকা জেলা বাংলাদেশের রাজধানী এবং প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এই জেলা দেশের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।
- ইতিহাস: ১৬০৮ সালে মুঘল শাসনকালে ঢাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তখন থেকেই এটি ক্রমাগতভাবে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
২. ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু
- ভৌগোলিক অবস্থান: ঢাকা জেলা ২৩°৪২’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর সীমানা পূর্বে নারায়ণগঞ্জ, পশ্চিমে মানিকগঞ্জ, উত্তরে গাজীপুর এবং দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ।
- জলবায়ু: ঢাকার জলবায়ু উষ্ণ এবং আদ্র। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকালে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ও ঠাণ্ডা।
৩. প্রশাসনিক কাঠামো ও উপবিভাগ
- উপজেলা: ঢাকা জেলায় ৫টি উপজেলা রয়েছে—ঢাকা সদর, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, এবং সাভার।
- পৌরসভা: ঢাকা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হয়।
৪. জনসংখ্যা ও জনমানবিক বৈশিষ্ট্য
- মোট জনসংখ্যা: ঢাকা জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটিরও বেশি।
- ভাষা: বাংলা এখানকার প্রধান ভাষা এবং স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার রয়েছে।
- ধর্ম ও সম্প্রদায়: এখানে মূলত মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি হলেও হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে।
৫. অর্থনীতি ও শিল্প খাত
- শিল্প: ঢাকায় গার্মেন্টস, পাট, চামড়া, ঔষধ, ইলেকট্রনিক্স, এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
- কৃষি: ঢাকায় কৃষি সীমিত থাকলেও কেরানীগঞ্জ এবং সাভারের কিছু অঞ্চলে সবজি ও মৎস্য চাষ রয়েছে।
৬. শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখানে অবস্থিত।
- স্কুল ও কলেজ: এখানে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ রয়েছে, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
৭. স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা
- সরকারি হাসপাতাল: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইত্যাদি দেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র।
- বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক: এখানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যেমন অ্যাপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ইত্যাদি।
৮. পর্যটন আকর্ষণ ও দর্শনীয় স্থান
- লালবাগ কেল্লা: মুঘল আমলের স্থাপত্যকীর্তি।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধ: মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
- আহসান মঞ্জিল: ঐতিহাসিক প্রাসাদ এবং জাদুঘর।
- বাহাদুর শাহ পার্ক: ব্রিটিশ আমলের স্মারক।
৯. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
- রেলওয়ে: ঢাকায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
- সড়কপথ: ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি সড়কপথে যাতায়াতের সুব্যবস্থা রয়েছে।
- বিমানবন্দর: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট চলে।
১০. স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি
- প্রতিনিধিত্ব: জাতীয় সংসদে ঢাকা জেলার জন্য একাধিক আসন রয়েছে।
- জেলা প্রশাসন: জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
১১. বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জাতির জনক, যিনি ঢাকায় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
- কাজী নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশের জাতীয় কবি, যিনি ঢাকায় বসবাস করেছিলেন।
১২. জরুরি যোগাযোগ
- জরুরি সেবা: পুলিশ – ৯৯৯, ফায়ার সার্ভিস – ১০২।
- প্রধান হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল।
১৩. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
- উৎসব: পহেলা বৈশাখ, ঈদ, দুর্গাপূজা ঢাকায় অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়।
- খাদ্য: ঢাকার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে বিড়ি, ফুচকা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার জনপ্রিয়।
১৪. উন্নয়ন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- বাণিজ্যিক উন্নয়ন: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংযোগ আরও উন্নত হয়েছে। ঢাকার উন্নয়নে আরও অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
- বসবাসের উন্নতি: বসবাসের মান উন্নয়নের জন্য ঢাকায় নানান হাউজিং প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
Leave a Reply